বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক এবং সম্ভবত দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রতিভাবান ব্যাটার মোহাম্মদ আশরাফুল দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় পর আবারও জাতীয় দলের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন—তবে ভিন্ন ভূমিকায়। আসন্ন আয়ারল্যান্ড সিরিজের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তাকে বিশেষ ব্যাটিং কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আশরাফুল নতুন দায়িত্ব নিয়ে তার ভাবনা তুলে ধরেছেন।
নিয়োগ নিয়ে আশরাফুলের প্রতিক্রিয়া
এটা নিঃসন্দেহে আমার জন্য এক রোমাঞ্চকর ও গর্বের মুহূর্ত। আমি এই দেশের হয়ে খেলেছি, অধিনায়কত্ব করেছি, আর এখন কোচ হিসেবে ফিরছি—এটা সত্যিই বিশেষ অনুভূতি। আমি তিন বছর আগে লেভেল-৩ কোচিং সার্টিফিকেট সম্পন্ন করেছি এবং এরপর ডিপিএল, বিপিএল ও এনসিএলে কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। বিশেষ করে রংপুর রাইডার্সের সঙ্গে কাজ করা আমাকে মূল্যবান অভিজ্ঞতা দিয়েছে। তবে জাতীয় দলের সঙ্গে কাজ করা সম্পূর্ণ ভিন্ন চ্যালেঞ্জ; এখানে প্রতিটি পদক্ষেপই থাকবে নজরদারিতে।
আগামী চ্যালেঞ্জ নিয়ে
প্রত্যাশা এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি, আর ফলাফলই এখানে আসল বিষয়। তবে আমি আশাবাদী, কারণ আমি এমন কিছু খেলোয়াড়ের সঙ্গে কাজ করব যাদের আমি ভালোভাবে চিনি—লিটন দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ ও মুশফিকুর রহিমের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা, যারা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলছেন।
বাংলাদেশের ব্যাটিং সমস্যা নিয়ে লক্ষ্য
আমার মূল মনোযোগ থাকবে ব্যাটিংয়ের মানসিক দিক নিয়ে। এই পর্যায়ে এসে একজন খেলোয়াড়ের টেকনিক পরিবর্তনের সুযোগ খুবই কম। আমার মতে, আমাদের মূল সমস্যা টেকনিক নয়—সমস্যা মানসিকতায়। আমরা প্রায়ই গেম সচেতনতা ও পরিস্থিতি বোঝার ঘাটতিতে ভুগি, যার কারণে ব্যাটাররা ভালো শুরু করেও বড় ইনিংস খেলতে পারেন না। এটা আমার খেলার সময় থেকেই একটা স্থায়ী সমস্যা। শক্ত ব্যাটিং ইউনিট গড়ে তুলতে হলে খেলোয়াড়দের নিজেদের চিন্তা করতে শিখতে হবে—নিজস্ব পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে এবং ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে খেলতে হবে।
ইংল্যান্ডে খেলার অভিজ্ঞতা আমাকে নিজের খেলা বোঝার গুরুত্ব শিখিয়েছে। শুধুমাত্র প্রতিভা দিয়ে সফলতা আসে না, যদি আপনি নিজের খেলা ও ম্যাচ পড়তে না পারেন। উদাহরণ হিসেবে লিটনের সাম্প্রতিক টি২০ ইনিংস বা সৌম্যর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ইনিংস—দুটোই গেম সচেতনতার ঘাটতির উদাহরণ। অন্যদিকে মুশফিকুর রহিম সফল কারণ তিনি শৃঙ্খলাবদ্ধ ও ক্রিকেট বুদ্ধিসম্পন্ন।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যবধান নিয়ে
আমাদের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, কেন খেলোয়াড়রা ঘরোয়া ক্রিকেটের ফর্ম আন্তর্জাতিক মঞ্চে ধরে রাখতে পারে না। আসলে এর মূল কারণ গেম সচেতনতা ও ব্যক্তিগত পরিকল্পনার অভাব। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দেখতে একই রকম মনে হলেও মানের পার্থক্য অনেক। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আপনাকে মানসম্পন্ন পাঁচজন বোলারের মুখোমুখি হতে হয় কঠিন উইকেটে। দ্রুত মানিয়ে নিতে ও নিজের খেলা গভীরভাবে বুঝতে হয়।
অনেক খেলোয়াড় ব্যর্থ হয় কারণ তারা আন্তর্জাতিক ম্যাচকে ঘরোয়া ম্যাচের মতো নেয়। এখানে জানা জরুরি, কখন ঝুঁকি নিতে হবে, আর কখন শান্ত থাকতে হবে। আপনি যদি শুধু রান তাড়ায় মনোযোগ দেন, ম্যাচের পরিস্থিতি না বুঝে, তাহলে আপনি সমস্যায় পড়বেন। আমি এই দিকটাই ঠিক করতে চাই—খেলোয়াড়দের আরও বুদ্ধিদীপ্তভাবে চিন্তা করতে ও ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানাতে সাহায্য করা।