গত সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে আলাদা দুই ম্যাচে আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে কড়া শাস্তি পেয়েছেন পাকিস্তানের হারিস রউফ। চার ডিমেরিট পাওয়ায় তাকে দুই ম্যাচ নিষিদ্ধ করেছে আইসিসি। একই কারণে শাস্তি পেয়েছেন ভারতের সূর্যকুমার যাদব ও জাসপ্রিত বুমরাহও।
হারিস দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চলমান সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে খেলেননি। দ্বিতীয় ম্যাচেও খেলতে পারবেন না, কারণ তিনি আইসিসির নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছেন।
যদিও আইসিসি তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বলেছে যে রউফের অপরাধ সেপ্টেম্বরের ১৪ ও ২৮ তারিখে ঘটেছিল, বাস্তবে তা হয়েছিল ২১ সেপ্টেম্বর ও ২৮ সেপ্টেম্বর (ফাইনাল ম্যাচে)।
ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে হারিস বাউন্ডারি লাইনে বিমান ভূপাতিত করার অঙ্গভঙ্গি করেন। পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর দুই দেশের যুদ্ধ জড়িয়ে পড়ার সময় পাকিস্তান দাবি করে তারা ভারতের ছয়টি যুদ্ধ বিমান ভূপাতিত করেছে। খেলার মাঠে এই আগ্রাসী ছবি তোলা আনায় শাস্তি পেলেন হারিস। ফাইনালে হারিসকে বোল্ড করে তার এই ভঙ্গি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বুমরাহ, সেকারণে ডেমেরিট পেলেন তিনিও।
দুটি ক্ষেত্রেই তিনি আইসিসির আচরণবিধির ২.২১ ধারার লঙ্ঘন করেছেন, যা খেলাটির মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার সঙ্গে সম্পর্কিত। রউফ কোনো অভিযোগ স্বীকার না করায়, দুটি আনুষ্ঠানিক শুনানি অনুষ্ঠিত হয় এবং পরে শাস্তি ঘোষণা করা হয়। কোনো খেলোয়াড় ২৪ মাসের মধ্যে চারটি ডিমেরিট পয়েন্ট পেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়।
রউফের শাস্তি ছিল এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তানের তিন ম্যাচে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলির একাধিক শাস্তির মধ্যে একটি। ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবও একই ধারায় মন্তব্যের জন্য দুই ডিমেরিট পয়েন্ট পেয়েছেন। এক ডেমেরিট পয়েন্ট পেয়েছেন বুমরাহ।
টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার পাঁচ সপ্তাহ পর আইসিসি মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে শাস্তির তথ্য প্রকাশ করে। সাহিবজাদা ফারহানও ২১ সেপ্টেম্বরের এক ঘটনার জন্য সতর্কবার্তা ও এক ডিমেরিট পয়েন্ট পেয়েছেন, যদিও আইসিসি সেটিও ভুলবশত ১৪ সেপ্টেম্বর উল্লেখ করেছে।
১৪ সেপ্টেম্বর দুবাইয়ে এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে প্রথমবারের মতো অধিনায়কত্ব করা সূর্যকুমার ও সালমান আগা দুজনেই তীব্র উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচের নেতৃত্ব দেন। তিনটি ভারত-পাকিস্তান ম্যাচেই রাজনৈতিক উত্তেজনা মাঠে ছড়িয়ে পড়েছিল। ভারতীয় খেলোয়াড়রা কোনো ম্যাচেই পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাত মেলাননি, যা পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আগা ‘খেলার চেতনার পরিপন্থী’ বলে সমালোচনা করেন। জবাবে সূর্যকুমার বলেন, ‘কিছু বিষয় আছে যা ক্রীড়াসুলভ চেতনার চেয়েও বড়।’
এর জেরে একাধিক সংবাদ সম্মেলন বর্জন করে ম্যাচ বয়কটেরও হুমকি দেয় পাকিস্তান। এই দ্বন্দ্ব এতটাই বাড়ে যে পাকিস্তান প্রায় পুরো টুর্নামেন্ট থেকেই সরে যাওয়ার কথা ভাবছিল। তারা ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটকে দায়ী করেছিল, দাবি করে যে তিনিই খেলোয়াড়দের হাত মেলাতে নিষেধ করেছিলেন — যদিও আইসিসি এই দাবি অস্বীকার করে। এর ফলে পাকিস্তানের সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ম্যাচ এক ঘণ্টার বেশি বিলম্বিত হয়েছিল, পরে পিসিবি ও আইসিসি আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
এশিয়া কাপ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফাইনালে মুখোমুখি হয় ভারত ও পাকিস্তান। রোমাঞ্চকর ম্যাচে শেষ ওভারে ভারত জয় পায়। তবে নাটক এখানেই শেষ হয়নি। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ভারতীয় খেলোয়াড়রা এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) সভাপতি ও পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভির কাছ থেকে ট্রফি নিতে অস্বীকার করেন। তাদের চাওয়া ছিলো অন্য কোন অতিথি যেন ট্রফি বুঝিয়ে দেন। কিন্তু নাকভি ট্রফি না দিয়েই তা তালাবন্ধ করে চলে যান। দীর্ঘ সময় বিলম্বের পর ভারতীয় দল ট্রফি ছাড়াই উদযাপন করে। এখনো তারা ট্রফি বুঝে পায়নি।