মোবাইল ফোন চোরাচালান রোধ, কর ফাঁকি বন্ধ ও ক্লোন হ্যান্ডসেটের বিস্তার ঠেকাতে আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) চালু করতে যাচ্ছে সরকার। তবে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার পর বিদ্যমান অনিবন্ধিত ফোন নিবন্ধনের সময়সীমা আগামী বছরের ১৫ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
এনইআইআর ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিটি মোবাইল ফোনের ১৫ সংখ্যার অনন্য কোড বা আইএমইআই নম্বর দিয়ে ফোন শনাক্ত ও ট্র্যাক করা যাবে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) জানিয়েছে, ভোক্তা সুরক্ষা এবং বাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতেই মূলত ডিভাইস নিবন্ধনের এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের স্মার্টফোন বাজার দীর্ঘ দিন ধরেই আমদানিনির্ভর। অভিযোগ রয়েছে, বাজারের একটি বড় অংশই শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আসা ফোনে সয়লাব। মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এমআইওবি) তথ্যমতে, দেশে ব্যবহৃত মোট হ্যান্ডসেটের প্রায় ৬০ শতাংশই অনিবন্ধিত বা ‘গ্রে মার্কেট’ থেকে আসা। ওয়ারেন্টি বা বিক্রয়োত্তর সেবা না থাকলেও দাম কম হওয়ায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের কাছে এসব ফোনের চাহিদা আছে। কিন্তু অনিবন্ধিত ফোনের কারণে চুরি, জালিয়াতি বা অপরাধে ব্যবহৃত ফোন শনাক্ত করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।
সিম দিয়ে নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার সময় এনইআইআর স্বয়ংক্রিয়ভাবে হ্যান্ডসেটের ১৫ অংকের আইএমইআই যাচাই করবে।
আগামী ১৬ ডিসেম্বরের আগে যেসব ফোন নেটওয়ার্কে সচল আছে বা ছিল, সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনইআইআর ডেটাবেসে নিবন্ধিত হয়ে যাবে।
২০২৬ সালের ১৫ মার্চের পর অনিবন্ধিত, চোরাই বা অনুমোদনহীন ফোন মোবাইল নেটওয়ার্কে ব্লক হয়ে যাবে।
বিটিআরসি বলছে, এর ফলে আইএমইআই ক্লোনিং বা এক ফোনের আইএমইআই অন্য ফোনে ব্যবহারের জালিয়াতি বন্ধ হবে। গ্রাহকেরা চাইলে এখনই অনলাইনে নিজের ডিভাইসের বৈধতা যাচাই করতে পারছেন।
এ বিষয়ে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহারকারী নীলিমা হোসেন বলেন, ‘ভেবেছিলাম এনইআইআর চালুর পর আমার ফোন বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হওয়ার খবরে স্বস্তি পেলাম। আশা করি, এখন চুরি হওয়া ফোন উদ্ধারে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবে।’
এনইআইআর চালুর ঘোষণায় খুচরা বাজারে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। গত নভেম্বরের শেষ ও ডিসেম্বরের শুরুতে দেশের বিভিন্ন স্থানে দোকান বন্ধ রেখে প্রতিবাদ করেছেন ব্যবসায়ীরা। মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ (এমবিসিবি) বলছে, উচ্চ আমদানি কর এবং ‘গ্রে মার্কেটে’র ফোন অবিক্রীত থেকে যাওয়ার আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামের মোবাইলের দোকান বন্ধ থাকায় সাধারণ ক্রেতারাও ভোগান্তিতে পড়েছেন।
সাধারণ ব্যবহারকারীর জন্য এনইআইআর সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ—দু’টোই বয়ে আনবে। এনইআইআর চালুর ফলে চুরি ও নকল ফোনের দৌরাত্ম্য কমবে। ডিভাইস হারালে বা চুরি হলে উদ্ধারের সম্ভাবনা বাড়বে। বৈধ পথে কেনাকাটা উৎসাহিত হবে, ফলে ক্রেতারা বিক্রয়োত্তর সেবা ও ওয়ারেন্টির নিশ্চয়তা পাবেন। অন্যদিকে চ্যালেঞ্জ হলো, কম দামের ফোন পাওয়া কঠিন হবে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর খরচের চাপ বাড়তে পারে।
আইফোন ব্যবহারকারী আহমেদ ইফতেখার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এই প্রযুক্তির ফলে ফোনের মাধ্যমে হওয়া জালিয়াতি শনাক্ত করা সহজ হবে। তবে সরকারের কাছে কর ও ভ্যাট কমানোর দাবি জানাই, যাতে ক্রেতারা উপকৃত হন।’
বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার মুঠোফোন আমদানিতে বিদ্যমান ৬১ শতাংশ কর কমানোর পরিকল্পনা করছে। একই সঙ্গে খুচরা বিক্রয়ে ভ্যাট ব্যবস্থা সহজ করার কথাও জানানো হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত ক্রেতারা চান, সুলভ মূল্যে ভালো মানের হ্যান্ডসেট পাওয়ার নিশ্চয়তা।