প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লক্ষ্যটা ছিলো নাগালে। সেই লক্ষ্য পেরুতে গিয়েও ১৬ রানে হেরে সিরিজে পিছিয়ে পড়ে লিটন দাসের দল। তবে বৈশ্বিক টি-টোয়েন্টির বিচারে ১৬৬ রান নাগালের হলেও বাংলাদেশের বাস্তবতা যেন ভিন্ন। চলতি বছরের পরিসংখ্যান ঘাটলে দেখা যাচ্ছে লক্ষ্য যখনই দেড়শো ছাড়িয়েছে, বেশিরভাগ সময়ই পেরে উঠেনি বাংলাদেশ।
বুধবার বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে সিরিজ বাঁচানোই এখন একমাত্র লক্ষ্য নয় লিটন দাসের দলের। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে, টানা পঞ্চম টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের পথে থাকতে হলে দলটিকে আরও গভীর কিছু ভাবতে হবে।
২০২৫ সালে বাংলাদেশ মোট ২৫টি টি-টোয়েন্টি খেলেছে, যার মধ্যে ১৩টিতে জয় পেয়েছে, একটি ম্যাচ হয়েছিল পরিত্যক্ত। সংখ্যাগুলো মোটামুটি ভালোই শোনায়। বিশেষ করে যখন দেখা যায়, দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করে ১৫ ম্যাচের মধ্যে ৯টিতে জয় পেয়েছে—৬০ শতাংশ সাফল্যের হার। যদিও এরমাঝে খেলা বহুজাতিক আসর এশিয়া কাপে ব্যর্থ হয়েছে দল।
কিন্তু পরিসংখ্যানের এই বাহ্যিক সৌন্দর্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক উদ্বেগজনক প্রবণতা, যা আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টাইগারদের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
এই সময়ে বাংলাদেশ সাতটি ম্যাচে ১৫০ রানের বেশি লক্ষ্য তাড়া করেছে, এবং জিতেছে মাত্র দুইটিতে। মজার বিষয় হলো, এর একটি জয় এসেছিল মাত্র ১৫১ রানের লক্ষ্য তাড়া করে, গত অক্টোবরে শারজায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে।
অর্থাৎ, যখনই লক্ষ্য ১৫০ ছাড়িয়েছে, বাংলাদেশ হিমশিম খেয়েছে। এমনকি তারা এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩৬ রানের সাধারণ লক্ষ্যও তাড়া করতে পারেনি—যে ম্যাচে জয় পেলে তারা উঠত টুর্নামেন্টের ফাইনালে। সেই হারটি স্পষ্ট করে দিয়েছিল, গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মাঝারি লক্ষ্যও বাংলাদেশের কাছে কখনও কখনও পাহাড়সম।
মিরপুরের ধীর ও টার্নিং উইকেটে নিজের দলের শক্তির জায়গায় খেলে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর লিটন চট্টগ্রামের ভিন্ন ধরনের উইকেটে খেলার চ্যালেঞ্জের কথা বলেছিলেন—যেখানে পিচ আরও স্পোর্টিং আচরণ করে। বিশ্বকাপের আগে এমন পরীক্ষাকে তিনি বলেছিলেন প্রয়োজনীয়।
তবে এবার লিটন কূটনৈতিক ভদ্রতায় আবদ্ধ থাকেননি। প্রথম ওয়ানডেতে শামীম হোসেনের দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং নিয়ে তিনি প্রকাশ্যেই সমালোচনা করেন। পুরস্কার বিতরণীতে লিটনের স্পষ্ট বক্তব্য—’আমি শামীমের ব্যাটিংয়ে হতাশ। সব সময় শুধু ব্যাটিং উপভোগ করতে মাঠে নামা যাবে না, দায়িত্ব নিতে হবে।’
এমন সাহসী মনোভাব—যেখানে তিনি কঠিন উইকেটে খেলতে আগ্রহী এবং সতীর্থের ভুলেরও সমালোচনা করছেন—প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু একই সাহস তাকে দেখাতে হবে দলের বড় সমস্যার মুখোমুখি হয়ে: প্রতিপক্ষকে ১৫০ রানের নিচে আটকে রাখার জন্য বোলারদের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমাতে হবে।
যখন শীর্ষ দলগুলো টি-টোয়েন্টিতেও ২৫০ থেকে ৩০০ রানের ইনিংস পর্যন্ত খেলে ফেলছে, সেখানে বাংলাদেশের ১৫০-এর গণ্ডি পেরোতে হিমশিম খাওয়া একদিকে যেমন হাস্যকর মনে হয়, অন্যদিকে এটি এক নির্মম বাস্তবতা—যা পরিবর্তন না করলে আসন্ন বিশ্বকাপে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হবে।

