বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ও তার সহধর্মিণী সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের জ্যৈষ্ঠ কন্যা শারমিন আহমদ। জন্ম ঢাকায় হলেও ১৯৮৪ সাল থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ, গবেষণা ও সম্পাদনা নিয়ে তার একাধিক বই রয়েছে।
৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে হত্যা করা হয় সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামারুজ্জামান, মুহাম্মদ মনসুর আলী ও তাজউদ্দীন আহমদকে। এই বছর চলছে তাজউদ্দীন আহমদের জন্মশতবর্ষ। জেলহত্যা, বাবাকে নিয়ে স্মৃতিসহ নানা বিষয় নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন শারমিন আহমদ।
দ্য ডেইলি স্টার: অনেকেই মনে করেন, জেলহত্যার পেছনের কারণ ছিল স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে নেতৃত্ব শূন্য করা। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
শারমিন আহমদ: এটা সত্যি যে, ওনারা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রাণপুরুষ। যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তান কারাগারে অন্তরীণ করা হলো, সে সময় মুক্তিযুদ্ধ তো থেমে থাকেনি। তাজউদ্দীন আহমদ একটা সরকারের রূপরেখা করে, নিজেদের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। সরকার গঠন না করলে মুক্তিযুদ্ধকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সন্ত্রাস হিসেবে আখ্যায়িত করা সম্ভব হতো। এই দূরদর্শী ভাবনাটাই মুক্তিযুদ্ধকে এগিয়ে দেয়।
তাছাড়া বহির্বিশ্বের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ও যোগাযোগেরও সুবিধা হয়। এগিয়ে আসে ভারত। তার দেশের এক পাশে চীন, আরেক পাশে পাকিস্তান—দুই বৈরী রাষ্ট্র; এক কোটি শরণার্থী তার দেশে আশ্রয় নিয়েছে—এই জটিল পরিস্থিতিতে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে আইনগত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গেই রাষ্ট্রীয়ভাবে আলোচনা করা যায়।
১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতেই তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, এ যুদ্ধ বাংলাদেশের মানুষের মুক্তিযুদ্ধ, এই যুদ্ধে আমরাই লড়াই করে স্বাধীনতা আনব। ভারত মিত্র হিসেবে সহায়তা করবে এবং নিঃশর্তভাবে।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ওনার ১০ এপ্রিলের ভাষণে একই কথা বলেছিলেন। পুরো নয় মাস এই মুক্তিযুদ্ধে সরকারের নেতৃত্বেই সামরিক ও বেসামরিক মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়।
বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করে সরকার। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর গণহত্যার বিরুদ্ধে সাড়ে সাত কোটি মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হয়। আমরা স্বাধীনতা লাভ করি প্রথম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বেই।
দিক নির্দেশনাহীন একটি অপ্রস্তুত সময়ে তাজউদ্দীন যে গুছিয়ে মুক্তিযুদ্ধটাকে চিন্তাশীলভাবে এগিয়ে নিলেন, এতে স্বাধীনতাবিরোধীরা বুঝতে পেরেছিল যে, কেবল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষান্ত হওয়া যাবে না। এর পেছনের দেশপ্রেমিক বুদ্ধিমান মানুষগুলোকে শেষ করতে হবে।
নভেম্বরে যখন জেলখানায় তাজউদ্দীন আহমদকে তার তিন সহকর্মীসহ হত্যা করা হয়, তিনি তখন মন্ত্রিসভায় ছিলেন না। অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পদত্যাগ করেছিলেন ১৯৭৪ সালের ২৬ অক্টোবর। তারপরও স্বাধীনতাবিরোধীরা ভাবলেন, বুদ্ধিমান, জ্ঞানী ও দূরদর্শী মানুষটাকে হত্যা করতে হবে এবং সেইসঙ্গে তার সহযোগিদেরও।
মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতাবিরোধীদের মধ্যে খন্দকার মুশতাকের একটা নিজস্ব উপদল ছিল। সে সময়ের তথ্য দেখলে তা পরিষ্কার হবে।
ডেইলি স্টার: তখন অনেক ছোট আপনি। আজকের দিনে এসে কি মনে হয়, কেবলমাত্র স্বাধীনতাবিরোধী না, আন্তর্জাতিক কোনো ষড়যন্ত্রও ছিল এই হত্যাকাণ্ডে?
শারমিন আহমদ: একজন মানুষের ঘর দুর্বল হলে বাইরে থেকে যে কেউ ঢুকে পড়বে। আর আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা তো বহু দেশেই তাদের এজেন্ডা নিয়ে ওঁত পেতে থাকে। ভেতর যখন দুর্বল হয়, তারা তখন সুবিধাটা নেয়।
তার প্রমাণ পাবেন ‘৭৫ সালের হত্যাকাণ্ডের পর কারা সরকার গঠন করেছে তা দেখে। কারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে রেডিও স্টেশনে গেল? খন্দকার মোশতাক আহমেদ, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, মাহবুব আলম চাষী—তারা তো আওয়ামী লীগেরই লোক ছিলেন। ভেতর থেকেই তারা ষড়যন্ত্র চালিয়ে গেছেন। অবিপ্লবীদের হাতে যদি দেশ চলে যায়, অবিপ্লবীরা কি বিপ্লবীদের বাঁচিয়ে রাখবে? তাছাড়া কথায় আছে—ঘরের শত্রু বিভীষণ। তারাই প্রথমে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে। এ থেকেই সমস্যা শুরু।
এ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত পাবেন আমার লেখা ‘৩ নভেম্বর জেলহত্যার পূর্বাপর’ ও ‘তাজউদ্দীন আহমদ নেতা ও পিতা’ বইয়ে।
ডেইলি স্টার: তাহলে সত্য উন্মোচন কীভাবে করবে?
শারমিন আহমদ: সত্য উন্মোচনের জন্য আমাদের প্রথমে আত্মসমালোচনা জরুরি। সেইসঙ্গে ইতিহাসকে অখণ্ডিতভাবে জানা ও সংরক্ষণ করা দরকার।
আমার মনে আছে, বাবাকে গ্রেপ্তারের পর জেলখানায় আম্মা দেখা করতে গেলেন। বাবা তখন বারবার বলেছেন, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের মধ্যে যারা জেলের বাইরে আছে তাদের কাছে যে করে হোক তোমরা খবর পাঠাও, তারা যেন মোশতাককে সমর্থন দিতে বঙ্গভবনের ১৬ অক্টোবরের সভায় যোগ না দেয়। সেই খবর পৌঁছে দেওয়ার পরও অনেকেই সেই সভায় যোগ দিলেন। দেখেন, ভেতর থেকেই ঘটনাগুলো ঘটছে।
দুটো বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। প্রথমে, আমাদের নিজেদের ত্রুটি। তারপর বাইরের ষড়যন্ত্র উদঘাটন। ঘরের দরজার তালা যদি মজবুত থাকে, তাহলে চোর আসার আগে ভাববে। কিন্তু দরজার তালা যদি অকেজো হয়, দরজা নড়বড়ে হয়, তাহলে চোর-ডাকাত যেকোনো সময়ে আসতে পারে। আমার ঘর আমাদেরই শক্তিশালী করতে হবে।
এই যে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ঘটলো, আওয়ামী লীগ বলছে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। হতে পারে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র, কিন্তু নিজেদের বিষয় কথা নেই। বিগত প্রশাসনের এতটুকু আপসোস নেই যে তারা একটি গণহত্যা ঘটিয়েছে। তাদের সীমাহীন দুর্নীতি, বিনাভোট, নিপীড়ন—মূলত এসব দেখে মানুষ ঘরে থাকতে পারেনি। বাস্তবতা হচ্ছে, গণঅভ্যুত্থান কেউ জোর করে ঘটাতে পারে না। মানুষের মনের আকাঙ্ক্ষা না থাকলে গণঅভ্যুত্থান ঘটানো যায় না। তাই আমাদের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বারবার একটা কথা বলেছেন, ইতিহাসের ধারাবাহিকতা জানা ও রক্ষা করা জরুরি। ইতিহাসকে খণ্ডন করা হলে এবং ইতিহাসের ভেতরে ফাঁক রাখলে শুধু স্বাধীনতাবিরোধীরাই নয়, যে যখন ক্ষমতায় আসবে সে তার মতই ইতিহাসের বয়ান সৃষ্টি করবে। এত যুগ ধরে তাই হয়ে এসেছে।
এর ফলে সত্য প্রকাশিত হয়নি। উল্টো আমাদের মধ্যে আত্মপরিচয়ের সংকট, বিভ্রান্তি ও বিভেদ বেড়েছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করতে হলে তার জন্মের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ পর্বের ইতিহাসের ধারাবাহিকতা জানা বিশেষত জরুরি।
ডেইলি স্টার: একটি স্মৃতি কথায় পড়েছিলাম, আতাউর রহমানকে তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু যেভাবে দেশ চালাচ্ছেন তাতে তিনিও শেষ হবেন, আমাদেরকেও শেষ করে যাবেন। তাহলে এতে স্বাধীনতাবিরোধীরা আসে কীভাবে?
শারমিন আহমদ: সে কারণেই আত্মসমালোচনার কথা আগেই বলেছি। বাস্তবে এটাই ঘটেছে। দেশ স্বাধীনের পর থেকেই বাংলাদেশ চলেছে মহান মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা ও উদ্দেশ্যের বিপরীতে। স্বাধীন দেশে, গণ-মানুষের কল্যাণে সাম্য, সামাজিক ন্যায় বিচার ও মানবিক মর্যাদার ভিত্তি গঠন করা প্রাধান্য পায়নি। এখানে ব্যক্তি, পারিবারিক ও গোষ্ঠী স্বার্থ রক্ষাটাই প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠে। একটি সুন্দর স্বাধীন দেশের স্বপ্ন বুকে নিয়ে যে লাখো মানুষ প্রাণ দিল, এত ত্যাগ করলো—তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথটি সুগম করে দেওয়ার বিরাট সুযোগ ছিল নবজাত বাংলাদেশে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তো সুযোগ্য ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের পথে গেলেন না। যার জন্য তিনিও প্রাণ হারালেন এবং তাজউদ্দীনের মতো লোকদেরও প্রাণ হারাতে হলো।
ডেইলি স্টার: জেলহত্যা রোধ করতে জেল প্রশাসন কি তাদের দায়িত্ব পালন করেছিল?
শারমিন আহমদ: না। তারা তাদের কাজটা ঠিকভাবে পালন করেননি। জেলহত্যা বিষয়ে ১৯৮৭ সালে প্রথম গবেষণা শুরু করি। কথা বলেছি বিভিন্ন জায়গায়। সাক্ষাৎকার নেই জেলহত্যাকাণ্ডের একজন তদন্তকারী ব্রিগেডিয়ার আমিনুল হক বীর উত্তম, জেলহত্যা তদন্ত কমিশনের সদস্য বিচারপতি কে. এম সোবহান, রাজনীতিবিদ আবদুস সামাদ আজাদসহ অনেকের সঙ্গে—যারা জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ডের সময় তাদের সঙ্গে জেলখানায় বন্দী ছিলেন।
বিগ্রেডিয়ার হক পরে এনএসআই হেড হয়েছিলেন খালেদা জিয়া প্রশাসনে। তিনি মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফের (বীর উত্তম) নির্দেশে তৎকালীন ডিআইজি প্রিজন আব্দুল আউয়ালসহ অন্যান্যদের সাক্ষাৎকার নেন। ডিআইজি বলেন, আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারিনি এবং আমাদের চোখের সামনে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তখন তারা সত্যি যদি তাদের ডিউটি পালন করতেন, তাহলে ওনাদেরকে রক্ষা করা যেত। এর মাঝেও ডিআইজি প্রিজন হত্যাকারীদের বলেছিলেন, আপনারা অস্ত্র নিয়ে জেলের ভেতরে ঢুকতে পারবেন না, এটা বেআইনি। তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, আপনাদের কে পাঠিয়েছে? তারা বলে, প্রেসিডেন্ট মোস্তাক পাঠিয়েছে। এটাও বলে যে তারা হত্যা করতে এসেছে।
আইজি নুরুজ্জামান প্রেসিডেন্টকে বঙ্গভবনে ফোন করলেন। ফোন ধরেছিলেন মেজর আব্দুর রশীদ। তিনি বললেন, ওদেরকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হোক। তখন আইজি বললেন, আমি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একবার কথা বলতে চাই। তখন খন্দকার মুশতাক ফোনে এসে বললেন, রশীদের কথা মতোই কাজ করেন।
এই কথা পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর এর সংবাদ প্রতিবেদনে আইজি ও ডিআইজি প্রিজনসের বিবৃতির মধ্যেও প্রকাশিত হয়েছিল। হত্যাকারী ও মানবতাহীন প্রেসিডেন্ট ও তার দোসরদের বেআইনি আদেশে সবাই একেবারেই ভয় পেয়ে গেলেন। একজন অফিসারও সেদিন তাদের ডিউটি পালন করেননি। খুনিরা অস্ত্র নিয়ে ভেতরে ঢোকার সময় শুধু ডিআইজি প্রতিবাদ করেছিলেন। জেলখানার নিরাপত্তার জন্যে ২০০ বিডিআর সদস্য জেলে মোতায়েন ছিল। তাদের সহায়তা নিয়ে হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধ করা কি যেত না?
ডেইলি স্টার: আপনারা সংবাদটা কীভাবে পেলেন?
শারমিন আহমদ: সুবেদার মোসলেমসহ চার হত্যাকারী হত্যাকাণ্ড শেষ করে ভোররাত ৪টা ৩৫ মিনিটের দিকে জেলখানা ত্যাগ করে। নায়েক এ আলী ১ ঘণ্টা পর আরেক দল নিয়ে এসে মৃত্যু নিশ্চিত করে যায়। ‘পানি পানি’ বলে আমার বাবার আর্তনাদ পাশের রুম থেকে অনেকে শুনেছেন। দ্বিতীয় দল সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও মনসুর আলীর দেহে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। চোখের মধ্যেও বেয়নেট চার্জ করে। এমন নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
আমরা জানলাম একদিন পর। চারজনের মরদেহই পড়ে রইলো নিউ জেলের ভেতর।
হত্যাকাণ্ডের দিন খুব সকালে আম্মা জেগে উঠলেন। আমাদের ঘরে এসে বললেন, আমি একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছি। তোমার বাবা একটা ফুল বাগানের মধ্যে একটা সিংহাসনে বসা। তার গায়ে সাদা গেঞ্জি এবং আকাশে মধ্যগগনের সূর্য। কিন্তু সেটা অস্তমিত সূর্যের মতো টকটকে লাল। ওই সূর্য থেকে একদম রক্তের মতো লাল আলোর ধারা তোমার বাবার পুরা সাদা গেঞ্জি লাল করছে। কে যেন বলছে, দেশের ওপর ভয়াবহ বিপদ, ভয়াবহ বিপদ। আম্মা স্বপ্নটি দেখে খুব অস্থির হলেন। সবার মন ঝটপট করছিল। আমাদের বাসার ওপর দিয়ে খুব নিচু হয়ে কিছু ফাইটার জেট উড়ে গেল। আমরা চাচার বাসায় গেলাম। কিন্তু, কোনো খবর পাইনি, রেডিও বন্ধ।
আমার আব্বুর ভাই মফিজউদ্দীন আহমদ। তিনি খুবই অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে। চাচার বাড়িতে কোনো ফোন ছিল না। কাছেই অ্যাডভোকেট মেহেরুনন্নেসার বাড়ি থেকে সংবাদ এলো, আমার মাকে জরুরি কিছু বলা হবে, ওনার বাসায় যেতে হবে। বলা হয়েছিল, শুধুমাত্র বেগম তাজউদ্দীনকেই বলা হবে। আমি আর আম্মা রিকশায় করে গিয়ে দেখি, ওনার বাড়ির সামনে ডক্টর করিম দাঁড়ানো। তিনি চীনপন্থি রাজনীতি করতেন ছোটবেলা থেকেই। আব্বুর সঙ্গে তার ছাত্রজীবন থেকেই ভীষণ সখ্যতা। আম্মাকে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, তাজউদ্দীনসহ চারজনকে মেরে ফেলেছে জেলখানায়। আম্মা খবরটা শুনে নিষ্প্রাণ হয়ে গেলেন। মুখে কথা নেই। আমি আর্তনাদ করে বললাম, এ নিশ্চয়ই ভুল সংবাদ।
ডেইলি স্টার: কত ঘণ্টা পরে আপনারা খবরটা জানলেন?
শারমিন আহমদ: প্রায় ৪০ ঘণ্টা পর। তখনো নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না। কারণ, তখন সরকার বলতে কিছু নেই, রেডিও-টেলিভিশন বন্ধ, সংবাদও নেই। নিজেদের মধ্যে আলাপ চলছে, অস্থিরতা চলছে।
তখন আমরা লোক পাঠানো আরম্ভ করলাম। ফোন করা আরম্ভ করলাম বিভিন্ন জায়গায়। তারপরে দেখি কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফোলা অবস্থায় বেগম নুরুন্নাহার সামাদ ( আব্দুস সামাদ আজাদের স্ত্রী ) আমার চাচার বাসায় আসলেন। বললেন যে হ্যাঁ জেলখানায় পাগলা ঘন্টি বেজেছে ও গোলাগুলির শব্দ শোনা গিয়েছে জেনেছেন। বিকেল চারটার দিকে মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফের মা ফুপাতো ভাই নজরুল ইসলাম খান বাবুলকে আলাদা ডেকে হত্যাকান্ডের সংবাদ জানান। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আওয়ামীলীগ নেতা ময়েজউদ্দীন আহমদ সহকর্মীদের নিয়ে আম্মার কাছে জেলহত্যার সংবাদ কনফার্ম করেন।
আমার আরেক ফুপাত ভাই আবু সাঈদ শাহিদ উনি জেলখানায় লাশ আনতে যান সন্ধ্যা ৭ টার দিকে। ওনাকে পাঁচ ঘন্টা গেটের সামনে কতৃপক্ষ বসিয়ে রাখার পর রাত ১২টায় লাশ হস্তান্তর করে। তারপর আমাদের সেই ধানমন্ডি বাড়িতে চিরনিদ্রায় শায়িত আব্বু ফিরে আসেন। লাশ ধোয়ান আমার খালাত ভাই মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম চৌধুরী সাঈদ ও আমাদের দরদরিয়া গ্রামের বারেক মিয়া। *তারা দেখেন মোট তিনটা গুলীর ক্ষত। পায়ের গোড়ালিতে, উরুতে ও ডান কোমরের হাড়ের সন্ধিক্ষনে। কোন ভাইটাল জায়গায় গুলী লাগেনি। রক্ত ক্ষরণে মৃত্যু হয়। ডঃ করিমও গুলীর ক্ষত দেখেছিলেন।
ডেইলি স্টার: সরাসরি মরদেহ দিল, নাকি ময়নাতদন্ত হয়েছিল? মামলা হয়েছে?
শারমিন আহমদ: ময়নাতদন্তে লেখা—গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু। বিস্তারিত নেই। লালবাগ থানায় মামলা হয়েছিল। ওগুলো সবই চাপা পড়ে ছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত ধামাচাপা দেওয়া ছিল। মোশতাক অর্ডিনেন্স জারি করলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হবে না এবং জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সেই অবৈধ অর্ডিনেন্সকে স্থায়ী করে নিলেন। তার মানে আমরা দেখছি যে, রাজনীতিবিদরা-ক্ষমতাসীনরা কীভাবে আমাদের বিচার প্রক্রিয়া, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বড় বাধা হয়। এ দেশের রাজনীতি ও রাজনীতিবিদরাই সত্য ও ন্যায়ের পথে বড় বাধা।
প্রত্যেকে ক্ষমতায় এসে তার নিজের বিষয় দেখে, দেশ ও দশের বিষয় ভাবে না। সত্য ও ন্যায় হাহাকার করে। তাই জেলহত্যা মামলাও তেমন করে এগিয়েছে। আসল ষড়যন্ত্রকারীরা রাজনৈতিক প্রটেকশন পেয়ে গেছে। কারাগারে ঢুকে যারা ৬০ রাউন্ড গুলি চালিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চার নেতাকে হত্যা করলো, তারা পালিয়ে গেছে। তাদের হদিস পাওয়া যায়নি। কারও অনুপস্থিতিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। বলা যায় প্রহসনমূলক বিচার হয়েছে।
ডেইলি স্টার: বাবা ছাড়া সন্তান, পরিবার প্রধান ছাড়া সংসার—কীভাবে জীবনযাপন করেছেন?
শারমিন আহমদ: খুব কষ্ট করে জীবন চলেছে আমাদের। আমাদের বাড়ির নিচতলায় স্কুল ছিল, সেটার ভাড়া দিয়ে সংসার চলত। প্রথম দিকে তো সেটাও কেউ ভাড়া নিতে চাইত না। ঘরে পর্যাপ্ত খাবার থাকতো না, যাতায়াতের পয়সা-কড়ি ছিল না—এভাবেই আমাদের চলতে হয়েছে। স্কুলের বেতন দিতে পারিনি তিন মাস। আমার নাম কাটা যায়। এই অবস্থা তখন আমাদের ছিল। এখন হয়তো এগুলো কেউ বিশ্বাস করবে না যে একজন সাবেক অর্থমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের এই দশা। আমাদের বাড়িটাতে তখনও হাউস বিল্ডিংয়ের ঋণ ছিল।
ডেইলি স্টার: ১৯৭৫ সালের পর তাজউদ্দীন আহমদকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়?
শারমিন আহমদ: তারা বলেছে গ্রেফতার না, নিরাপত্তার জন্য নিয়ে যাচ্ছে। প্রথম সপ্তাহ গৃহবন্দী আব্বুর সাথে ছিলাম পরে গ্রেফতারের পর আমাদেরকে আরো এক মাস গৃহবন্দী করে রাখা হয় আমাদের। আমাদের ফোন লাইন কেটে দেওয়া হয় এবং ছাদের উপর এন্টি এয়ারক্রাফট মেশিন বসানো হয়। আমার ছোট কাকা আফসার উদ্দীন আহমদ , এডভোকেট ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের। উনি বহু কস্টে আমাদের জন্য আব্বুর সাথে জেলে দেখা করার পারমিশন নিলেন। আব্বু কিন্তু যাবার একটা সুটকেসে কাপড় চোপড় নিলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখার ডায়রিটা এবং উনার কোরআন শরীফটা নিলেন। এবং মা এবং আমাদের থেকে বিদায় নিয়েই গেলেন , কারন তিনি জানতেন শেষ বিদায়। চলে যেতে যেতে একটু ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে হাত নেড়ে মাকে বললেন- মনে করো চিরদিনের জন্যই চলে যাচ্ছি । “টেক ইট ফরএভার।”
ডেইলি স্টার: ডায়রিটা কি পেয়েছিলেন?
শারমিন আহমদ: না। পাব বলে আশায় ছিলাম, পাইনি। গুলিতে আব্বুর কোরআন শরীফটা ঝাঁঝরা হয়ে যায়। আব্বুর রক্তমাখা গেঞ্জি, শার্ট সবই বাড়িতে আসে। কিন্তু ওই ডাইরি ছিল না।
ডেইলি স্টার: বাবার কোন স্মৃতি মনে পড়ে? নেতা ও পিতা হিসেবে তিনি কতটা আলাদা?
শারমিন আহমদ: নেতা ও পিতা হিসেবে ওনাকে আলাদা করে দেখিনা। কারন ঘরে বাইরে ওনার একই রুপ। সৎ, সাহসী , নীতিবান, বিনয়ী, মানব দরদী এবং দেশ, সমাজ ও স্রস্টার সৃষ্টির প্রতি প্রচন্ড রকমের দায়িত্ববোধ। মনে পড়ে, আমরা আব্বুর সঙ্গে সকালে হাঁটতাম, তিনি আমাদের নিয়ে রাস্তায় পরে থাকা, ভাংগা চুরা- আবর্জনা পরিষ্কার করতেন, রাস্তার কুকুরগুলোকে ঘরে নিয়ে যেতেন। আমি আর আব্বু মিলে ওগুলোকে সাবান দিয়ে গোসল করিয়ে খাওয়াদাওয়া করাতাম। ওরাই আমাদের সঙ্গী হতো। নিজ হাতে বাগান করতেন। খাঁচার পাখী পছন্দ করতেন না। মুক্ত পাখীদের জন্যে শস্যদানা-ফল বাগানে রাখতেন। ঝড়ে মৃত পাখীর জন্যে বেদনার্ত হতেন। আমি মনে করি, সত্যিকারের বড় নেতা তিনিই, যিনি সার্বিকভাবে সবার কষ্ট বুঝতে পারেন—একটা সমাজে এমনকি একটা কুকুর, বিড়াল বা পাখির কষ্টও যিনি হৃদয়ে ধারণ করেন মানুষের দুঃখ-কষ্টের পাশাপাশি। তিনিই প্রকৃত অর্থে একজন ভালো নেতা।
ডেইলি স্টার: এমন অসাধারণ নেতার সময় ১৯৭৪ দুর্ভিক্ষটা কীভাবে এলো?
শারমিন আহমদ: এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের সেই সময়ের আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বাস্তবতা একসঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। দুর্ভিক্ষের কারণ ছিল বহুমাত্রিক। ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরাইলের যুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যের তেল রফতানিকারি দেশগুলি ইসরাইলকে সহায়তাকারী যুক্তরাস্ট্র ও অন্যান্য দেশের উপর রফতানী নিষেধাজ্ঞ্যা ও তেলের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। তেলের দাম প্রচণ্ড রকমের বেড়ে যায়। ১৯৭৪ এর মার্চ মাস পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বিশ্ব অর্থনীতিতে- ব্যাবসায়-বানিজ্যে – বিশাল মূল্য স্ফীতির মধ্যে দিয়ে এর নেতিবাচক প্রভাব বিরাজমান থাকে আরও অনেকদিন। এর ধাক্কা পরে যুদ্ধ বিধস্ত বাংলাদেশের উপরেও। জাতিসংঘের UNROB ত্রাণ কার্যক্রম ১৯৭৩ সালের শেষে বন্ধ হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্র PL-480 খাদ্য সাহায্য স্থগিত করে এবং বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি খাদ্য আমদানিকে কঠিন করে তোলে। এই সব মিলিয়ে দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়।
অভ্যন্তরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন ভেঙে পড়েছিল। প্রশাসনিক দুর্বলতা ও দুর্নীতির কারণে চাল মজুত, কালোবাজারি এবং পারমিট বিক্রির মাধ্যমে সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। রাষ্ট্রীয় শিল্পে অদক্ষ দলীয় নিয়োগের ফলে চুরি ও অপচয় বেড়ে যায়। একই সময়ে বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে ফসলহানি ঘটে, যা সংকটকে আরও তীব্র করে তোলে।
তাজউদ্দীন আহমদ এই সংকট মোকাবেলায় একাধিক সাহসী ও দূরদর্শী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণে একটি নৈতিক বাজেট প্রণয়ন করেন, খাদ্য সরবরাহ ও গুদাম ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করেন, রপ্তানি বৃদ্ধির উদ্যোগ নেন এবং আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালান। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কৃষি ও শিক্ষা খাতে সর্ববৃহৎ বাজেট বরাদ্দ দেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল—কৃষি সম্পদকে রপ্তানিমুখী করে পরনির্ভরতা কমানো সম্ভব, আর শিক্ষা দিয়েই জাতির মেরুদণ্ড গড়ে তুলে আলোকিত ও বহুমাত্রিক সফলতা অর্জন করা যায়
কিন্তু দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন, দলীয় চাপ এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তাঁর নীতির বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। মনে করুন, বঙ্গবন্ধু যখন বললেন—’সব দুর্নীতিবাজদের ধরতে হবে’, তখন দেখা গেল, আর্মি-পুলিশ যাদের ধরে, তারা প্রায় সবাই দলের প্রভাবশালী লোক। পরে তারা আবার ছাড়া পেয়ে যায়। এতে জনগণের আস্থায় ভয়াবহ ধস নামে।
তাজউদ্দীন আহমদ নৈতিক নেতৃত্বের মাধ্যমে দুর্ভিক্ষের সংকট মোকাবেলার চেষ্টা করেন এবং এমন একটি অর্থনৈতিক দর্শন রেখে গেছেন, যেখানে আত্মনির্ভরতা, স্বচ্ছতা ও জনগণের কল্যাণ ছিল কেন্দ্রীয়। দুর্ভিক্ষ তাঁর ব্যর্থতা নয়, বরং একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত জাতির বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি—যার বিরুদ্ধে তিনি একা দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর নেতৃত্বের উত্তরাধিকার আজও আমাদের নৈতিক সাহস ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ববোধের অনুপ্রেরণা হয়ে আছে।
ডেইলি স্টার: সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আপনার মন্তব্য কী? ২০২৪ সালের নভেম্বরে আপনি বলেছিলেন যে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। এই মন্তব্যের পেছনের কারণ কী ছিল?
শারমিন আহমদ:যা আশা করেছিলাম তা পূরণ হয়নি। গণজাগরণের পরেও দেশ আজও নেতৃত্বশূন্য এক গভীর সংকটে নিমজ্জিত। ওদিকে আত্মসমালোচনার বদলে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব দোষ চাপানোর প্রবণতা অব্যাহত রেখেছে এবং যারা সত্য বলেন, তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। তবে এই প্রবণতা শুধু তাদের একার নয়—বর্তমানে ক্ষমতাসীন এবং অন্যান্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোও এখনও আত্তসমালোচনার মধ্যে দিয়ে আত্তশুদ্ধিকরনের সেই সাহস ও দূরদৃষ্টি দেখাতে পারেনি, যা জাতির প্রাপ্য।
নিরাময় শুরু হয় সাহস থেকে—ভুল ও অন্যায় স্বীকার করার সাহস। যখন নেতৃত্ব আত্ত উপলব্ধির মাধ্যমে সত্যকে গ্রহণ করে, তখন তারা একে অন্যকে দোষারোপের চক্র ভাঙতে পারে। এর ফলে নিজেদের কর্মপন্থা উন্নত হয় এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি হয়। জবাবদিহিতা দুর্বলতা নয়; এটি পুনর্জাগরণের প্রথম ধাপ।
আমার বাবা, মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, জেলের আঙিনায় শত শত ফুল রোপণ করেছিলেন। সেই ফুলের মধ্য দিয়ে তিনি আশার বীজ বপন করেছিলেন। আমাদেরও তাই করতে হবে— সত্য, বিনয়, আত্ত উপলব্ধি এবং দূরদৃষ্টির মাধ্যমে।
ডেইলি স্টার: তাজউদ্দীন আহমদের জন্মশতবর্ষ চলছে। এ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গেও দেখা করেছেন। কী কথা হয়েছে?
শারমিন আহমদ: তাজউদ্দীন আহমদের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ জানাতে যোগাযোগ করেছিলাম। বলেছি, তরুণরা বিভেদ দেখতে চায় না, তারা শান্তি ও ন্যায়বিচার চায়। এমনকি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত তরুণদের নানাভাবে সহায়তা করতে গিয়ে দেখেছি, তারা তাদের আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা পোষণ করে না বা প্রতিশোধের কথা ভাবে না। তাদের অনেকেই বলেছেন, তারা আজীবন পঙ্গু হয়ে থাকলেও যদি দেখেন যে দেশের মানুষ নিরাপদে আছে, ন্যায়বিচার পাচ্ছে, তাহলেই তারা শান্তি পাবেন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ- শিক্ষা ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে দেখার কথা ওনাকে বলেছিলাম। এবং আমরা দাবি জানাই—এই দিনটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করুক সরকার।

